হিজরত 2
হযরত মূসা (আঃ)-এর জন্ম
1এই সময়ে লেবির গোষ্ঠীর একজন লোক একই গোষ্ঠীর একটি মেয়েকে বিয়ে করলেন। 2মেয়েটি গর্ভবতী হলেন এবং তাঁর একটি ছেলে হল। ছেলেটি দেখতে খুব সুন্দর ছিল। সেইজন্য তার মা তাকে তিন মাস পর্যন্ত লুকিয়ে রাখলেন। 3কিন্তু যখন তাকে আর লুকিয়ে রাখা সম্ভব হল না তখন তিনি নল দিয়ে বোনা একটা টুকরি নিয়ে তাতে মেটে তেল ও আল্কাত্রা লেপে দিলেন আর ছেলেটিকে তার মধ্যে শুইয়ে সেটা নীল নদের পারে পানির মধ্যে একটা নলবনে রেখে আসলেন। 4ছেলেটির দশা কি হয় তা দেখবার জন্য তার বোন সেখান থেকে কিছু দূরে দাঁড়িয়ে রইল।
5কিছুক্ষণ পরে ফেরাউনের মেয়ে নদীতে গোসল করতে আসলেন। তাঁর বাঁদীরা তখন নদীর পারে ঘোরাফেরা করছিল। এমন সময় তিনি নলবনের মধ্যে সেই টুকরিটা দেখতে পেয়ে সেটা তাঁর কাছে নিয়ে আসবার জন্য একজন বাঁদীকে পাঠিয়ে দিলেন। 6সেটা খুলে তিনি আশ্চর্য হয়ে দেখলেন একটা ছেলে তার মধ্যে কাঁদছে। ছেলেটির উপর শাহজাদীর খুব মায়া হল। তিনি বললেন, “এটি ইবরানীদের কোন ছেলে।”
7তখন ছেলেটির বোন এসে ফেরাউনের মেয়েকে বলল, “আমি কি আপনার জন্য একজন ইবরানী স্ত্রীলোক ডেকে আনব, যে একে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবে?”
8তিনি বললেন, “হ্যাঁ, যাও।” তখন মেয়েটি গিয়ে ছেলেটির মাকেই ডেকে আনল।
9ফেরাউনের মেয়ে তাঁকে বললেন, “এই ছেলেটিকে নিয়ে গিয়ে আমার হয়ে তোমার বুকের দুধ খাইয়ে লালন-পালন কর। এর জন্য আমি তোমাকে বেতন দেব।” তখন সেই স্ত্রীলোকটি ছেলেটিকে নিয়ে গিয়ে দুধ খাইয়ে তাকে লালন-পালন করতে লাগলেন।
10ছেলেটি একটু বড় হলে পর স্ত্রীলোকটি তাকে ফেরাউনের মেয়ের কাছে নিয়ে গেলেন, আর তিনি তাকে নিজের ছেলে হিসাবে গ্রহণ করলেন। তিনি বললেন, “ওকে আমি পানি থেকে তুলে এনেছি।” সেইজন্য তিনি তার নাম দিলেন মূসা।
মাদিয়ান দেশে হযরত মূসা (আঃ)
11পরে বড় হয়ে মূসা একদিন তাঁর নিজের জাতির লোকদের সংগে দেখা করতে গিয়ে দেখলেন, কি ভীষণ পরিশ্রম তাদের করতে হচ্ছে। তাঁর চোখে পড়ল যে, তাঁর নিজের ইবরানী জাতির একজন লোককে একজন মিসরীয় মারধর করছে। 12তিনি এদিক ওদিক তাকিয়ে আশেপাশে কাউকে দেখতে পেলেন না। তখন তিনি সেই মিসরীয়কে হত্যা করে বালি চাপা দিয়ে রাখলেন। 13পরদিন মূসা আবার বাইরে গিয়ে দু’জন ইবরানীকে মারামারি করতে দেখলেন। যে দোষী তাকে তিনি বললেন, “কেন তুমি তোমার ভাইকে মারছ?”
14লোকটি বলল, “কে তোমাকে আমাদের নেতা ও শাসনকর্তা করেছে? সেই মিসরীয়ের মত আমাকেও হত্যা করতে চাও নাকি?” এই কথা শুনে মূসা ভয় পেলেন। তিনি ভাবলেন, নিশ্চয়ই ব্যাপারটা জানাজানি হয়ে গেছে।
15ফেরাউন এই ঘটনা জানতে পেরে মূসাকে হত্যা করবার চেষ্টা করতে লাগলেন। কিন্তু মূসা ফেরাউনের কাছ থেকে পালিয়ে মাদিয়ান দেশে বাস করবার জন্য চলে গেলেন। সেখানে গিয়ে তিনি একটা কূয়ার ধারে বসে রইলেন। 16সেখানকার মাদিয়ানীয় ইমামের সাতটি মেয়ে ছিল। তারা তাদের পিতার ভেড়াগুলোকে পানি খাওয়াবার জন্য পানি তুলে গামলা ভরতে সেই জায়গায় গেল। 17কিন্তু কয়েকজন রাখাল এসে কূয়ার কাছ থেকে সেই মেয়েদের তাড়িয়ে দিল। এই ব্যাপার দেখে মূসা উঠে তাদের সাহায্য করলেন এবং তাদের ভেড়াগুলোকে পানি খেতে দিলেন। 18সেই মেয়েরা তাদের পিতা রূয়েল অর্থাৎ শোয়াইবের কাছে ফিরে গেলে পর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “আজ তোমরা এত তাড়াতাড়ি কি করে ফিরে আসলে?”
19তারা বলল, “রাখালদের হাত থেকে একজন মিসরীয় আমাদের রক্ষা করেছেন। কেবল তা-ই নয়, তিনি পানি তুলে আমাদের ভেড়াগুলোকেও পানি খাইয়েছেন।”
20তিনি তাঁর মেয়েদের জিজ্ঞাসা করলেন, “লোকটি কোথায়? তোমরা তাকে ফেলে আসলে কেন? তাকে ডেকে এনে কিছু খেতে দাও।”
21পরে মূসা সেই ইমামের সংগে থাকতে রাজী হলেন এবং তিনি মূসার সংগে তাঁর মেয়ে সফুরার বিয়ে দিলেন। 22সফুরার একটি ছেলে হলে পর মূসা তার নাম রাখলেন গের্শোম, কারণ তিনি বলেছিলেন, “আমি পরদেশের বাসিন্দা হয়ে আছি।”
23এর অনেক দিন পরে মিসরের বাদশাহ্ইন্তেকাল করলেন। এদিকে বনি-ইসরাইলরা তাদের গোলামীর দরুন কাতর হয়ে হাহাকার করতে লাগল। এই অবস্থা থেকে উদ্ধার পাবার জন্য তাদের এই ফরিয়াদ উপরে আল্লাহ্র কাছে গিয়ে পৌঁছাল। 24আল্লাহ্তাদের কাতর স্বর শুনলেন এবং ইব্রাহিম, ইসহাক ও ইয়াকুবের জন্য যে ব্যবস্থা তিনি স্থাপন করেছিলেন সেই কথা ভাবলেন। 25তিনি বনি-ইসরাইলদের দিকে চেয়ে দেখলেন এবং তাদের দিকে মনোযোগ দিলেন।