ইয়ারমিয়া 6
জেরুজালেম আক্রমণ
1মাবুদ বলছেন, “হে বিন্ইয়ামীনের লোকেরা, রক্ষা পাবার জন্য পালাও। জেরুজালেম থেকে পালাও। তকোয় শহরে শিংগা বাজাও। বৈৎ-হক্কেরমে সংকেত দেখাও, কারণ উত্তর দিক থেকে বিপদ ও ভয়ংকর ধ্বংস উঁকি মারছে। 2সুন্দরী ও আরামে থাকা সিয়োন্তকন্যাকে আমি ধ্বংস করব। 3রাখালেরা যেমন ভেড়ার পাল নিয়ে আসে তেমনি করে বাদশাহ্রা তাদের সৈন্যদল নিয়ে তার বিরুদ্ধে আসবে; তার চারপাশে তারা তাম্বু খাটাবে এবং যে যার জায়গায় থাকবে। 4তারা বলবে, ‘তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নাও। ওঠো, চল, আমরা দুপুর বেলায় আক্রমণ করি। কিন্তু হায়, দিনের আলো কমে যাচ্ছে, আর সন্ধ্যার ছায়া লম্বা হচ্ছে। 5কাজেই ওঠো, চল, আমরা রাতেই আক্রমণ করি এবং তার কেল্লাগুলো ধ্বংস করে দিই।’ ”
6আল্লাহ্রাব্বুল আলামীন তাদের এই কথা বলছেন, “তোমরা গাছপালা কেটে তা দিয়ে জেরুজালেমের বিরুদ্ধে তার দেয়ালের সংগে ঢিবি তৈরী কর। এই শহরকে শাস্তি দিতে হবে; এটা অত্যাচারে ভরে গেছে। 7কূয়ার পানি যেমন সব সময় তাজা থাকে তেমনি করে সে তার দুষ্টতা সব সময় চালু রাখে। তার মধ্যে জুলুম ও ধ্বংসের শব্দ শোনা যায়; তার অসুস্থতা ও আঘাত সব সময় আমার সামনে রয়েছে। 8হে জেরুজালেম, সাবধানবাণী শোন, তা না হলে আমি তোমার কাছ থেকে ফিরে গিয়ে তোমার দেশ ধ্বংস ও জনশূন্য করব।”
9আল্লাহ্রাব্বুল আলামীন বলছেন, “আংগুর ক্ষেত থেকে যেমন ভাল করে আংগুর ঝেড়ে ফেলা হয় তেমনি শত্রুরা দেশ থেকে বনি-ইসরাইলদের ঝেড়ে ফেলবে। যে লোক আংগুর তোলে সে যেমন আবার ডালে হাত দেয় তারাও বাকী লোকদের প্রতি তেমনি করবে।”
10আমি কার সংগে কথা বলব ও কাকে সাবধান করব যাতে তারা আমার কথা শোনে? তাদের কান বন্ধ তাই তারা শুনতে পায় না। মাবুদের কালাম তাদের টিট্কারির বিষয় হয়েছে; তারা তাতে কোন আনন্দ পায় না। 11কিন্তু আমি মাবুদের রাগে পূর্ণ হয়েছি; আমি আর তা আমার ভিতরে ধরে রাখতে পারছি না।
মাবুদ জবাবে বলছেন, “তুমি তা রাস্তায় ছেলেমেয়েদের উপরে ও একসংগে জমায়েত হওয়া যুবকদের উপরে ঢেলে দাও। স্বামী ও স্ত্রী তার মধ্যে ধরা পড়বে, আর বুড়োরা ও খুব বুড়োরা রেহাই পাবে না। 12যারা দেশে বাস করে তাদের বিরুদ্ধে যখন আমি শাস্তির হাত বাড়িয়ে দেব তখন অন্যদের হাতে তাদের বাড়ী-ঘর, জমাজমি ও স্ত্রীদের তুলে দেওয়া হবে।
13“ছোট থেকে বড় পর্যন্ত সবাই লাভের জন্য লোভ করে; এমন কি, নবী ও ইমাম সবাই ছলনা করে। 14তারা আমার বান্দাদের ঘা এমনভাবে বেঁধে দেয় যেন তা বিশেষ কিছু নয়। তারা বলে, ‘শান্তি, শান্তি,’ কিন্তু আসলে শান্তি নেই। 15তারা কি তাদের সেই জঘন্য কাজের জন্য লজ্জিত? না, তাদের কোন লজ্জা নেই; তারা লজ্জায় লাল হতে জানেই না। সেইজন্য তারা তাদের মধ্যে পড়বে যারা শাস্তি ভোগ করবে। আমি যখন তাদের শাস্তি দেব তখন তাদের নত করা হবে। আমি মাবুদ এই কথা বলছি।”
16মাবুদ তাঁর বান্দাদের বলছেন, “তোমরা রাস্তার চৌমাথায় দাঁড়িয়ে তাকিয়ে দেখে পুরানো পথের কথা জিজ্ঞাসা কর; ভাল পথ কোথায় তা জিজ্ঞাসা করে সেই পথে চল। তাতে তোমরা নিজের নিজের দিলে বিশ্রাম পাবে। কিন্তু তোমরা বলেছ, ‘আমরা সেই পথে চলব না।’ 17আমি তোমাদের উপরে পাহারাদার নিযুক্ত করে বলেছি, ‘তোমরা শিংগার আওয়াজ শোন,’ কিন্তু তোমরা বলেছ, ‘আমরা শুনব না।’ 18কাজেই হে অন্যান্য জাতিরা, শোন; আমার বান্দাদের যা হবে তা লক্ষ্য কর। 19হে দুনিয়া শোন, আমি লোকদের উপর বিপদ ডেকে আনব; তা হবে তাদের পরিকল্পনার ফল, কারণ তারা আমার কথা শোনে নি আর আমার শরীয়তকে অগ্রাহ্য করেছে। 20হে আমার বান্দারা, সাবা দেশ থেকে যে ধূপ আসে কিংবা দূর দেশ থেকে যে মিষ্টি বচ আসে তাতে আমার কি দরকার? তোমাদের পোড়ানো-কোরবানী আমার গ্রহণযোগ্য নয়; তোমাদের পশু-কোরবানী আমাকে সন্তুষ্ট করে না।”
21কাজেই মাবুদ বলছেন, “এই লোকদের সামনে আমি নানা বাধা রাখব। পিতা ও ছেলেরা একসংগে তাতে উচোট খাবে; প্রতিবেশীরা ও বন্ধুরা ধ্বংস হয়ে যাবে।”
22মাবুদ এই কথা বলছেন, “দেখ, উত্তর দিকের দেশ থেকে একদল সৈন্য আসছে; দুনিয়ার শেষ সীমা থেকে একটা বড় জাতি উত্তেজিত হয়ে আসছে। 23তাদের কাছে ধনুক ও বর্শা আছে; তারা নিষ্ঠুর এবং কোন দয়া দেখায় না। ঘোড়ায় চড়ে আসবার সময় তাদের আওয়াজ উঠছে সমুদ্রের গর্জনের মত; হে সিয়োন্তকন্যা, তোমাকে আক্রমণ করবার জন্য তারা যোদ্ধার মত প্রস্তুত হয়ে আসছে।”
24আমরা তাদের সম্বন্ধে খবর পেয়েছি আর তাই আমাদের হাত যেন অবশ হয়ে ঝুলে পড়েছে। যন্ত্রণা আমাদের আঁকড়ে ধরেছে; প্রসবকারিণী স্ত্রীলোকদের মত ব্যথা আমাদের ধরেছে। 25তোমরা মাঠে যেয়ো না কিংবা রাস্তায় হেঁটো না, কারণ শত্রুর হাতে তলোয়ার আছে আর সব দিকেই রয়েছে ভীষণ ভয়। 26হে আমার লোকেরা, ছালার চট পর আর ছাইয়ের মধ্যে গড়াগড়ি দাও। একমাত্র ছেলের মৃত্যুতে যেমন লোকে শোক করে তেমনি ভীষণ বিলাপ করে তোমরা শোক কর, কারণ ধ্বংসকারী হঠাৎ আমাদের উপরে এসে পড়বে।
27মাবুদ বলছেন, “আমি তোমাকে আমার বান্দাদের যাচাইকারী করেছি যাতে তুমি তাদের দিকে লক্ষ্য রেখে তাদের পথগুলো যাচাই করতে পার। 28তারা সবাই দারুণ বিদ্র্রোহী; তারা বদনাম করে বেড়ায়। তারা ব্রোঞ্জ আর লোহার মত; তারা সবাই খারাপ হয়ে গেছে। 29আগুন দিয়ে সীসা পুড়িয়ে ফেলবার জন্য হাপর ভীষণভাবে বাতাস দিচ্ছে; কিন্তু অনর্থক খাদ বের করবার চেষ্টা করা হচ্ছে, কারণ দুষ্টদের বের করা যাচ্ছে না। 30তাদের বলা হয় অগ্রাহ্য করা রূপা, কারণ আমি মাবুদ তাদের অগ্রাহ্য করেছি।”