ইয়ারমিয়া 7
লোকদের অবাধ্যতা ও গুনাহ্
1-2 মাবুদ ইয়ারমিয়াকে বায়তুল-মোকাদ্দসের দরজায় দাঁড়িয়ে এই খবর ঘোষণা করতে বললেন যে, এহুদার যে সমস্ত লোক এই দরজাগুলো দিয়ে মাবুদের এবাদত করবার জন্য ঢোকে তারা যেন মাবুদের কালাম শোনে। 3ইসরাইলের মাবুদ আল্লাহ্রাব্বুল আলামীন বলছেন, “তোমরা যদি তোমাদের আচার-ব্যবহার ও কাজকর্ম সংশোধন কর তাহলে আমি তোমাদের এই জায়গায় বাস করতে দেব। 4মাবুদের ঘরের নাম নিয়ে বার বার যে মিথ্যা কথা বলা হয় তোমরা তা বিশ্বাস কোরো না। 5যদি সত্যিসত্যিই তোমরা তোমাদের আচার-ব্যবহার ও কাজকর্মের পরিবর্তন কর এবং ন্যায়ভাবে একে অন্যের সংগে ব্যবহার কর, 6যদি বিদেশী, এতিম কিংবা বিধবাদের জুলুম না কর এবং এই দেশে নির্দোষের রক্তপাত না কর আর দেব-দেবীদের পিছনে গিয়ে নিজেদের ক্ষতি না কর, 7তবে এই যে দেশ আমি তোমাদের পূর্বপুরুষদের যুগ যুগ ধরে বাস করবার জন্য দিয়েছি এখানে আমি তোমাদের বাস করতে দেব।
8“দেখ, তোমরা মিথ্যা কথায় বিশ্বাস করছ, কিন্তু তাতে কোন লাভ নেই। 9তোমরা তো চুরি, খুন, জেনা ও মিথ্যা কসম খাও আর বাল দেবতাদের উদ্দেশে ধূপ জ্বালাও। এছাড়া যে দেব-দেবীদের তোমরা চেন না তোমরা তাদের পিছনে গিয়ে থাক। 10তারপর এসে তোমরা আমার ঘরে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বল যে, তোমরা নিরাপদ। তোমরা তা কর যাতে তোমরা ঐ সব জঘন্য কাজ করে যেতে পার। 11আমার ঘর কি তোমাদের কাছে ডাকাতদের আড্ডাখানা হয়েছে? আমি মাবুদ বলছি যে, আমি এই সব দেখছি।
12“এখন তোমরা শীলোতে যেখানে আমি প্রথমে আমার বাসস্থান করেছিলাম সেখানে যাও আর আমার বান্দা বনি-ইসরাইলদের দুষ্টতার জন্য আমি তার অবস্থা কি করেছি তা দেখ। 13তোমরা এই সব গুনাহ্করেছ, অর্থাৎ আমি তোমাদের বার বার বললেও তোমরা শোন নি আর তোমাদের ডাকলেও জবাব দাও নি। 14এই যে ঘরের উপর তোমরা ভরসা করছ সেই ঘর আমি আমার বাসস্থান করেছিলাম, আর এই জায়গা আমি তোমাদের ও তোমাদের পূর্বপুরুষদের দিয়েছিলাম। কিন্তু তোমাদের গুনাহের জন্য এই ঘর ও এই জায়গার অবস্থা আমি সেই রকম করব যা আমি শীলোর প্রতি করেছিলাম। 15আমি তোমাদের ভাইদের প্রতি, অর্থাৎ আফরাহীমের লোকদের প্রতি যেমন করেছিলাম সেইভাবে আমার সামনে থেকে তোমাদের ঠেলে ফেলে দেব।”
16মাবুদ বলছেন, “এই লোকদের জন্য তুমি কোন মুনাজাত কোরো না, কিংবা তাদের জন্য ফরিয়াদ বা কোন বিশেষ অনুরোধ কোরো না; আমার কাছে কোন মিনতিও জানাবে না, কারণ আমি তোমার কথা শুনব না। 17তুমি কি দেখতে পাচ্ছ না তারা এহুদার শহরগুলোতে ও জেরুজালেমের রাস্তায় রাস্তায় কি করছে? 18ছেলেমেয়েরা কাঠ কুড়ায়, বাবারা আগুন জ্বালে আর স্ত্রীলোকেরা ময়দা মাখে ও আকাশ-রাণীর উদ্দেশে পিঠা বানায়। আমাকে দুঃখ দেবার জন্য তারা দেব-দেবীদের উদ্দেশে ঢালন-কোরবানী করে। 19কিন্তু এই সব করে কি তারা আমাকে দুঃখ দিচ্ছে? আসলে তারা তো নিজেদের উপর লজ্জা ডেকে আনছে আর নিজেদের দুঃখ দিচ্ছে।”
20সেইজন্য আল্লাহ্মালিক বলছেন, “আমার রাগ ও গজব এই জায়গার উপরে, মানুষ ও পশুর উপরে, মাঠের গাছপালা ও ভূমির ফলের উপরে ঢালা হবে, আর সেই রাগ জ্বলতেই থাকবে, নিভে যাবে না।”
21ইসরাইলের মাবুদ আল্লাহ্রাব্বুল আলামীন বলছেন, “তোমাদের অন্যান্য কোরবানীর সংগে তোমরা পোড়ানো-কোরবানী দিয়ে তার গোশ্তও খেয়ে ফেল না কেন? 22আমি এই কথা বলছি, কারণ যখন আমি মিসর থেকে তোমাদের পূর্বপুরুষদের বের করে এনেছিলাম তখন আমি পোড়ানো ও অন্যান্য কোরবানীর কথা বলি নি কিংবা হুকুম দিই নি, 23কিন্তু আমি তাদের এই হুকুম দিয়েছিলাম, ‘তোমরা আমার কথামত চল, তাতে আমি তোমাদের আল্লাহ্হব আর তোমরা আমার বান্দা হবে। আমি যে সব পথে চলবার হুকুম দিয়েছি সেই সব পথে চল যাতে তোমাদের উপকার হয়।’ 24কিন্তু তা তারা শোনে নি এবং তাতে মনোযোগও দেয় নি; তার বদলে তারা তাদের ইচ্ছামত, তাদের খারাপ দিলের একগুঁয়েমিতে চলেছে। তারা পিছু হটেছে, এগিয়ে যায় নি। 25তোমাদের পূর্বপুরুষেরা যখন মিসর ছেড়ে এসেছে তখন থেকে আজ পর্যন্ত দিনের পর দিন আমি তোমাদের কাছে আমার সমস্ত গোলামদের, অর্থাৎ নবীদের পাঠিয়ে আসছি। 26কিন্তু তোমরা আমার কথা শোন নি কিংবা মনোযোগও দাও নি। তোমরা ঘাড় শক্ত করে তোমাদের পূর্বপুরুষদের চেয়েও আরও বেশী খারাপ কাজ করেছ।
27“তুমি যখন এই সব কথা তাদের বলবে তারা তোমার কথা শুনবে না; তুমি যখন তাদের ডাকবে তারা জবাব দেবে না। 28কাজেই তুমি তাদের বলবে, ‘তোমরা সেই জাতি, যে তার মাবুদ আল্লাহ্র ইচ্ছামত চলে নি কিংবা তাঁর সংশোধনে সাড়া দেয় নি। সত্য ধ্বংস হয়ে গেছে; কেউ সেই বিষয় মুখেও আনে না।’ ”
29হে জেরুজালেম, তোমার চুল কেটে তুমি দূরে ফেলে দাও; গাছপালাহীন পাহাড়ে পাহাড়ে বিলাপ কর, কারণ মাবুদ তাঁর গজবের নীচে থাকা এই লোকদের তিনি অগ্রাহ্য ও ত্যাগ করেছেন।
জবাই করবার উপত্যকা
30মাবুদ বলছেন, “আমার চোখে এহুদার লোকেরা খারাপ কাজ করেছে। আমার ঘরে তারা তাদের জঘন্য মূর্তিগুলো স্থাপন করে তা নাপাক করেছে। 31তারা তাদের ছেলেমেয়েদের আগুনে পোড়াবার জন্য বিন্তহিন্নোম উপত্যকায় তোফৎ নামে পূজার উঁচু স্থান তৈরী করেছে। কিন্তু এই হুকুম আমি দিই নি, আমার মনেও তা ঢোকে নি। 32কাজেই দেখ, এমন দিন আসছে যখন লোকেরা ঐ জায়গাকে আর বলবে না তোফৎ কিংবা বিন্তহিন্নোমের উপত্যকা, বরং বলবে জবাইয়ের উপত্যকা, কারণ যতদিন তোফতে জায়গা থাকবে ততদিন সেখানেই তারা মৃতদের দাফন করবে। 33তারপর এই লোকদের লাশ আকাশের পাখী ও দুনিয়ার পশুদের খাবার হবে আর সেগুলোকে তাড়িয়ে দেবার জন্য কেউ থাকবে না। 34আমি এহুদার শহরগুলোতে ও এহুদার সমস্ত পথে আনন্দ ও আমোদের শব্দ আর বর ও কনের গলার আওয়াজ বন্ধ করে দেব, কারণ দেশটা ধ্বংসস্থান হয়ে যাবে।”