লূক 3
হযরত ঈসা মসীহের বংশ-তালিকা
23প্রায় তিরিশ বছর বয়সে ঈসা তাঁর কাজ শুরু করলেন। লোকে মনে করত তিনি ইউসুফের ছেলে। ইউসুফ আলীর ছেলে;
23প্রায় তিরিশ বছর বয়সে ঈসা তাঁর কাজ শুরু করলেন। লোকে মনে করত তিনি ইউসুফের ছেলে। ইউসুফ আলীর ছেলে;
14ইয়াহিয়া জেলখানায় বন্দী হবার পরে ঈসা গালীল প্রদেশে গেলেন। সেখানে তিনি এই কথা বলে আল্লাহ্র দেওয়া সুসংবাদ তবলিগ করতে লাগলেন, 15“সময় হয়েছে, আল্লাহ্র রাজ্য কাছে এসে গেছে। আপনারা তওবা করুন এবং এই সুসংবাদের উপর ঈমান আনুন।”
16একদিন ঈসা গালীল সাগরের পার দিয়ে যাচ্ছিলেন। এমন সময় তিনি শিমোন ও তাঁর ভাই আন্দ্রিয়কে সাগরে জাল ফেলতে দেখলেন। সেই দু’জন ছিলেন জেলে। 17ঈসা তাঁদের বললেন, “আমার সংগে চল। আমি তোমাদের মানুষ-ধরা জেলে করব।” 18তখনই তাঁরা জাল ফেলে রেখে ঈসার সংগে গেলেন।
19সেখান থেকে কিছু দূরে গেলে পর তিনি সিবদিয়ের দুই ছেলে ইয়াকুব ও ইউহোন্নাকে দেখতে পেলেন। তাঁরা তাঁদের নৌকায় বসে জাল ঠিক করছিলেন। 20ঈসা তাঁদের দেখামাত্র ডাক দিলেন, আর তাঁরা তাঁদের বাবা সিবদিয়কে মজুরদের সংগে নৌকায় রেখে ঈসার সংগে গেলেন।
21ঈসা ও তাঁর সাহাবীরা কফরনাহূম শহরে গেলেন। পরে বিশ্রামবারে ঈসা মজলিস-খানায় গিয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন। 22লোকেরা তাঁর শিক্ষায় আশ্চর্য হয়ে গেল, কারণ তিনি আলেমদের মত শিক্ষা দিচ্ছিলেন না বরং যাঁর অধিকার আছে সেই রকম লোকের মতই শিক্ষা দিচ্ছিলেন।
23সেই সময় ভূতে পাওয়া একজন লোক সেই মজলিস-খানার মধ্যে ছিল। 24সে চিৎকার করে বলল, “ওহে নাসরতের ঈসা, আমাদের সংগে আপনার কি দরকার? আপনি কি আমাদের সর্বনাশ করতে এসেছেন? আমি জানি আপনি কে; আপনিই তো আল্লাহ্র সেই পবিত্রজন।”
25ঈসা তখন সেই ভূতকে ধমক দিয়ে বললেন, “চুপ কর, ওর মধ্য থেকে বের হয়ে যাও।”
26সেই ভূত তখন লোকটাকে মুচ্ড়ে ধরল এবং জোরে চিৎকার করে তার মধ্য থেকে বের হয়ে গেল। 27এই ঘটনা দেখে লোকেরা এমন আশ্চর্য হল যে, তারা নিজেদের মধ্যে বলতে লাগল, “এই সব কি ব্যাপার? এই অধিকার-ভরা নতুন শিক্ষাই বা কি? এমন কি, ভূতদেরও তিনি হুকুম দেন আর তারা তাঁর কথা শুনতে বাধ্য হয়।”
28এতে গালীল প্রদেশের সব জায়গায় ঈসার কথা খুব তাড়াতাড়ি ছড়িয়ে পড়ল।
29পরে তাঁরা মজলিস-খানা থেকে বের হয়ে শিমোন ও আন্দ্রিয়ের বাড়ীতে গেলেন। ইয়াকুব এবং ইউহোন্নাও তাঁদের সংগে ছিলেন। 30শিমোনের শাশুড়ীর জ্বর হয়েছিল বলে তিনি শুয়ে ছিলেন। ঈসা আসামাত্রই তাঁর কথা তাঁকে বলা হল। 31তখন ঈসা তাঁর কাছে গিয়ে হাত ধরে তাঁকে তুললেন। তাতে তাঁর জ্বর ছেড়ে গেল এবং তিনি তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার ব্যবস্থা করতে লাগলেন।
32সেই দিন সূর্য ডুবে গেলে পর সন্ধ্যাবেলা লোকেরা সব রোগীদের ও ভূতে পাওয়া লোকদের ঈসার কাছে আনল। 33শহরের সব লোক তখন সেই বাড়ীর দরজার কাছে এসে জমায়েত হল। 34ঈসা অনেক রকমের রোগীকে সুস্থ করলেন এবং অনেক ভূত ছাড়ালেন। তিনি ভূতদের কথা বলতে দিলেন না, কারণ সেই ভূতেরা জানত তিনি কে।
35পরদিন খুব ভোরে অন্ধকার থাকতেই ঈসা উঠলেন এবং ঘর ছেড়ে একটা নির্জন জায়গায় গিয়ে মুনাজাত করতে লাগলেন। 36শিমোন ও তাঁর সংগীরা ঈসাকে তালাশ করছিলেন। 37পরে তাঁকে তালাশ করে পেয়ে বললেন, “সবাই আপনাকে তালাশ করছে।”
38ঈসা তাঁদের বললেন, “চল, আমরা কাছের গ্রামগুলোতে যাই যেন আমি সেখানেও তবলিগ করতে পারি, কারণ সেইজন্যই তো আমি এসেছি।” 39এইভাবে ঈসা গালীলের সব জায়গায় গিয়ে ইহুদীদের মজলিস-খানাগুলোতে তবলিগ করলেন এবং ভূত দূর করলেন।
40পরে একজন চর্মরোগী ঈসার কাছে এসে তাঁর সামনে হাঁটু পেতে বলল, “আপনি ইচ্ছা করলেই আমাকে ভাল করতে পারেন।”
41লোকটির উপর ঈসার খুব মমতা হল। তিনি হাত বাড়িয়ে তাকে ছুঁয়ে বললেন, “আমি তা-ই চাই, তুমি পাক-সাফ হও।” 42আর তখনই তার চর্মরোগ ভাল হয়ে গেল।
43ঈসা তখনই তাকে বিদায় করলেন, কিন্তু তার আগে তাকে কড়াকড়িভাবে বললেন, 44“দেখ, এই কথা কাউকে বোলো না। তুমি বরং ইমামের কাছে গিয়ে নিজেকে দেখাও আর পাক-সাফ হবার জন্য মূসা যে কোরবানীর হুকুম দিয়েছেন তা কোরবানী দাও। এতে ইমামদের কাছে প্রমাণ হবে যে, তুমি ভাল হয়েছ।”
45সেই লোকটি কিন্তু বাইরে গিয়ে সব জায়গায় এই খবর ছড়াতে লাগল। তার ফলে ঈসা কোন গ্রামে আর খোলাখুলিভাবে যেতে পারলেন না। তাঁকে নির্জন জায়গায় থাকতে হল; তবুও লোকেরা সব জায়গা থেকে তাঁর কাছে আসতে লাগল।
1কয়েকদিন পরে ঈসা আবার কফরনাহূমে গেলেন। লোকেরা শুনল তিনি ঘরে আছেন। 2তখন এত লোক সেখানে জমায়েত হল যে, ঘর তো দূরের কথা, দরজার বাইরেও আর জায়গা রইল না। ঈসা লোকদের কাছে আল্লাহ্র কালাম তবলিগ করছিলেন। 3এমন সময় কয়েকজন লোক একজন অবশ-রোগীকে তাঁর কাছে নিয়ে আসল। চারজন লোক তাকে বয়ে আনছিল, 4কিন্তু ভিড়ের জন্য তারা তাকে ঈসার কাছে নিয়ে যেতে পারল না। এইজন্য ঈসা যেখানে ছিলেন ঠিক তার উপরের ছাদের কিছু অংশ তারা সরিয়ে ফেলল। তারপর সেই খোলা জায়গা দিয়ে মাদুর সুদ্ধই সেই অবশ-রোগীকে নীচে নামিয়ে দিল। 5তারা ঈমান এনেছে দেখে ঈসা সেই অবশ-রোগীকে বললেন, “বাছা, তোমার গুনাহ্মাফ করা হল।”
6সেখানে কয়েকজন আলেম বসে ছিলেন। তাঁরা মনে মনে ভাবছিলেন, 7“লোকটা এই রকম কথা বলছে কেন? সে তো কুফরী করছে। একমাত্র আল্লাহ্ছাড়া আর কে গুনাহ্মাফ করতে পারে?”
8তাঁরা যে ঐ সব কথা ভাবছেন তা ঈসা নিজের অন্তরে তখনই বুঝতে পারলেন। এইজন্য তিনি তাঁদের বললেন, “আপনারা কেন মনে মনে ঐ সব কথা ভাবছেন? 9এই অবশ-রোগীকে কোন্টা বলা সহজ- ‘তোমার গুনাহ্মাফ করা হল,’ না, ‘ওঠো, তোমার মাদুর তুলে নিয়ে হেঁটে বেড়াও’? 10কিন্তু আপনারা যেন জানতে পারেন দুনিয়াতে গুনাহ্মাফ করবার ক্ষমতা ইব্ন্তেআদমের আছে”- এই পর্যন্ত বলে তিনি সেই অবশ-রোগীকে বললেন, 11“আমি তোমাকে বলছি, ওঠো, তোমার মাদুর তুলে নিয়ে বাড়ী চলে যাও।”
12তখনই সেই লোকটি উঠে তার মাদুর তুলে নিল এবং সকলের সামনেই বাইরে চলে গেল। এতে সবাই আশ্চর্য হয়ে আল্লাহ্র প্রশংসা করে বলল, “আমরা কখনও এই রকম দেখি নি।”
13পরে ঈসা আবার গালীল সাগরের ধারে গেলেন। তখন অনেক লোক তাঁর কাছে আসল, আর তিনি তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। 14এর পরে তিনি পথে যেতে যেতে দেখলেন আল্ফেয়ের ছেলে লেবি খাজনা আদায় করবার ঘরে বসে আছেন। ঈসা তাঁকে বললেন, “এস, আমার উম্মত হও।” তখন লেবি উঠে ঈসার সংগে গেলেন।
15পরে ঈসা লেবির বাড়ীতে খেতে বসলেন। তখন অনেক খাজনা-আদায়কারী ও খারাপ লোকেরাও ঈসা ও তাঁর সাহাবীদের সংগে খেতে বসল, কারণ অনেক লোক ঈসার সংগে সংগে যাচ্ছিল। 16ফরীশী দলের আলেমেরা যখন দেখলেন ঈসা খাজনা-আদায়কারী ও খারাপ লোকদের সংগে খাচ্ছেন তখন তাঁরা তাঁর সাহাবীদের বললেন, “উনি খাজনা-আদায়কারী ও খারাপ লোকদের সংগে খাওয়া-দাওয়া করেন কেন?”
17এই কথা শুনে ঈসা সেই আলেমদের বললেন, “সুস্থদের জন্য ডাক্তারের দরকার নেই বরং অসুস্থদের জন্যই দরকার আছে। আমি ধার্মিকদের ডাকতে আসি নি বরং গুনাহ্গারদেরই ডাকতে এসেছি।”
1এর পরে ঈসা আবার মজলিস-খানায় গেলেন। সেখানে একজন লোক ছিল যার একটা হাত শুকিয়ে গিয়েছিল। 2ফরীশীদের মধ্যে কয়েকজন ঈসাকে দোষ দেবার অজুহাত খুঁজছিলেন। বিশ্রামবারে ঈসা লোকটাকে সুস্থ করেন কি না তা দেখবার জন্য তাঁরা তাঁর উপর ভাল করে নজর রাখতে লাগলেন। 3ঈসা সেই শুকনা-হাত লোকটিকে বললেন, “সকলের সামনে এসে দাঁড়াও।”
4তারপর ঈসা ফরীশীদের জিজ্ঞাসা করলেন, “বিশ্রামবারে ভাল কাজ করা উচিত, না খারাপ কাজ করা উচিত? প্রাণ রক্ষা করা উচিত, না নষ্ট করা উচিত?”
ফরীশীরা কিন্তু কোনই জবাব দিলেন না। 5তখন ঈসা বিরক্ত হয়ে তাঁদের দিকে তাকিয়ে দেখলেন এবং তাঁদের অন্তরের কঠিনতার জন্য গভীর দুঃখের সংগে সেই লোকটিকে বললেন, “তোমার হাত বাড়িয়ে দাও।”
লোকটি হাত বাড়িয়ে দিলে পর তার হাত একেবারে ভাল হয়ে গেল। 6তখন ফরীশীরা বাইরে গেলেন এবং কিভাবে ঈসাকে হত্যা করা যায় সেই বিষয়ে বাদশাহ্হেরোদের দলের লোকদের সংগে পরামর্শ করতে লাগলেন।
7-8এর পরে ঈসা তাঁর সাহাবীদের সংগে সাগরের ধারে গেলেন। গালীল প্রদেশের অনেক লোক তাঁর পিছনে পিছনে চলল। ঈসা যে সব কাজ করছিলেন সেগুলোর কথা শুনে এহুদিয়া, জেরুজালেম, ইদোম, জর্ডান নদীর ওপার এবং টায়ার ও সিডন শহরের চারদিক থেকে অনেক লোক তাঁর কাছে আসল। 9ঈসা নিজের জন্য একটা ছোট নৌকা তাঁর সাহাবীদের ঠিক করে রাখতে বললেন যেন ভিড়ের দরুন লোকে চাপাচাপি করে তাঁর উপর না পড়ে। 10তিনি অনেক লোককে সুস্থ করেছিলেন বলে রোগীরা তাঁকে ছোঁবার জন্য ঠেলাঠেলি করছিল।
11ভূতেরা যখনই তাঁকে দেখত তখনই তাঁর সামনে মাটিতে পড়ে চিৎকার করে বলত, “আপনিই ইব্নুল্লাহ্।” 12কিন্তু তিনি খুব কড়াভাবে তাদের হুকুম দিতেন যেন তারা কাউকে না বলে তিনি কে।
13-15এর পরে ঈসা পাহাড়ের উপরে উঠলেন এবং নিজের ইচ্ছামত কিছু লোককে তাঁর কাছে ডেকে নিলেন। তাঁরা ঈসার কাছে আসলে পর তিনি বারোজনকে সাহাবী-পদে নিযুক্ত করলেন যেন তাঁরা তাঁর সংগে সংগে থাকেন এবং ভূত ছাড়াবার ক্ষমতা দিয়ে তিনি তাঁদের তবলিগ-কাজে পাঠাতে পারেন।