শুমারী 11
মাবুদের কাছে বনি-ইসরাইলদের অভিযোগ
1বনি-ইসরাইলদের যে সব দুঃখ-কষ্ট হচ্ছিল তা নিয়ে তারা মাবুদের সামনে চেঁচামেচি করতে লাগল। তা শুনে মাবুদ রেগে গেলেন। তাঁর পাঠানো আগুন তাদের মধ্যে জ্বলতে লাগল এবং ছাউনির কিনারার কিছু লোককে পুড়িয়ে মারল। 2এতে লোকেরা মূসার কাছে কান্নাকাটি করতে লাগল আর তিনি মাবুদের কাছে মুনাজাত করলেন। তাতে আগুন নিভে গেল। 3মাবুদের এই আগুন তাদের মধ্যে জ্বলেছিল বলে সেই জায়গাটার নাম হল তবেরা।
গোশ্তের ব্যবস্থা
4বনি-ইসরাইলদের সংগে অন্যান্য জাতির যে লোকেরা ছিল তারা অন্য রকম খাবারের লোভে পাগল হয়ে উঠল। তাদের দেখাদেখি বনি-ইসরাইলরা আবার কান্নাকাটি করে বলতে লাগল, “হায়, যদি আমরা গোশ্ত খেতে পেতাম! 5মিসর দেশে বিনা পয়সায় মাছ খাবার কথা আমাদের মনে পড়ছে। এছাড়া শসা, তরমুজ, পিঁয়াজ, সবজী পিঁয়াজ এবং রসুনের কথাও আমাদের মনে পড়ছে। 6কিন্তু এখন আমাদের ভিতরটা শুকিয়ে গেছে। মান্না ছাড়া আমাদের চোখে আর কিছুই পড়ছে না।”
7মান্নার আকার ছিল ধনে বীজের মত, আর তা দেখতে ছিল গুগ্গুলুর মত। 8লোকেরা ঘুরে ঘুরে সেগুলো কুড়িয়ে আনত আর জাঁতায় কিংবা হামানদিস্তায় গুঁড়া করে নিত। সেগুলো তারা হাঁড়ির মধ্যে সিদ্ধ করত কিংবা তা দিয়ে রুটি বানাত। তার স্বাদ ছিল জলপাইয়ের তেল দিয়ে বানানো পিঠার মত। 9রাতে ছাউনি-এলাকায় শিশির পড়ত আর তার উপর পড়ত মান্না।
10মূসা শুনতে পেলেন প্রত্যেক পরিবারের লোকেরা তাদের নিজের নিজের তাম্বুর দরজার কাছে কাঁদছে। এতে মাবুদ রাগে জ্বলে উঠলেন আর মূসাও বিরক্ত হলেন। 11তিনি মাবুদকে বললেন, “তুমি তোমার গোলামকে কেন এই বিপদে ফেলেছ? তোমাকে নারাজ করবার মত আমি এমন কি করেছি যে, তুমি এই সমস্ত লোকদের বোঝা আমার উপর চাপিয়েছ? 12আমি কি এই সব লোকদের পেটে ধরেছি? আমি কি এদের প্রসব করেছি? তুমি এদের পূর্বপুরুষদের কাছে যে দেশ দেবার কসম খেয়েছিলে সেখানে কেন তুমি আমাকে পালক-পিতার মত করে তাদের কোলে করে নিয়ে যেতে বলছ? 13এই সমস্ত লোকদের জন্য আমি কোথায় গোশ্ত পাব? তারা আমার কাছে কেবলই ‘গোশ্ত খেতে দাও’ বলে কান্নাকাটি করছে। 14তাদের বোঝা খুব ভারী, আমার একার পক্ষে তা বয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। 15তুমি যদি আমার অবস্থা এই রকমই কর তবে এখনই তুমি আমাকে মেরে ফেল। যদি আমি তোমার রহমত পেয়েই থাকি তবে নিজের চোখে আমার নিজের সর্বনাশ আমাকে দেখতে দিয়ো না।”
সত্তরজন বৃদ্ধ নেতা
16মাবুদ মূসাকে বললেন, “ইসরাইলীয়দের মধ্যে যাদের তুমি নেতা এবং সম্মানিত লোক বলে জান তাদের মধ্য থেকে সত্তরজন বৃদ্ধ নেতাকে আমার কাছে নিয়ে এস। তুমি তাদের মিলন-তাম্বুর কাছে এসে তোমার সংগে দাঁড়াতে বল। 17আমি সেখানে নেমে এসে তোমার সংগে কথা বলব। তোমার উপর যে রূহ্রয়েছেন আমি তাঁকে তাদের উপরেও দেব। লোকদের বোঝা বয়ে নিতে তারাই তোমাকে সাহায্য করবে। তাতে তোমাকে আর একা বোঝা বইতে হবে না। 18তুমি লোকদের বল, ‘তোমরা নিজেদের পাক-পবিত্র করে নিয়ে কালকের জন্য প্রস্তুত হও, কারণ কালকেই তোমরা গোশ্ত খেতে পাবে। তোমরা মাবুদের কাছে কেঁদে কেঁদে গোশ্ত খাবার কথা বলেছিলে আর জানিয়েছিলে যে, এর চেয়ে মিসর দেশেই তোমরা ভাল ছিলে। তাই এখন তিনি তোমাদের গোশ্ত দেবেন আর তোমরা তা খাবে। 19সেই গোশ্ত যে তোমরা কেবল একদিন, দু’দিন, পাঁচ দিন, দশ দিন কিংবা বিশ দিন খাবে তা নয়, 20খাবে গোটা এক মাস ধরে। তখন সেই গোশ্ত তোমাদের নাক দিয়ে বেরিয়ে আসবে আর গোশ্তে তোমাদের অরুচি ধরে যাবে। এই সব হবে কারণ যিনি তোমাদের মধ্যে রয়েছেন সেই মাবুদকে তোমরা অগ্রাহ্য করেছ আর তাঁর সামনে কেঁদে কেঁদে বলেছ যে, মিসর দেশ ছেড়ে আসা তোমাদের উচিত হয় নি।’ ”
21এই কথা শুনে মূসা বললেন, “যুদ্ধ করবার মত লোকই আমার সংগে রয়েছে ছয় লক্ষ, আর তুমি বলছ পুরো এক মাস ধরে তুমি তাদের গোশ্ত খেতে দেবে। 22তাদের গরু-ভেড়া সমস্ত কাটলেও তাদের পক্ষে যথেষ্ট হবে না। সমুদ্রের সমস্ত মাছ ধরে আনলেও তাতে তাদের কুলাবে না।”
23জবাবে মাবুদ মূসাকে বললেন, “মাবুদের কুদরত কি এতই কম? আমার কথাটা তোমার কাছে সত্যি হয়ে ওঠে কি না তা তুমি এবার দেখতে পাবে।”
24এই কথা শুনে মূসা বাইরে গিয়ে মাবুদ যা বলেছেন তা লোকদের জানালেন। তিনি বনি-ইসরাইলদের সত্তরজন বৃদ্ধ নেতাকে এনে মিলন-তাম্বুর সামনে দাঁড় করালেন। 25তখন মাবুদ সেই মেঘে ঘেরাও হয়ে নেমে এসে মূসার সংগে কথা বললেন। মূসার উপর যে রূহ্ছিলেন তাঁকে তিনি ঐ সত্তরজন বৃদ্ধ নেতার উপরেও দিলেন। যখন সেই রূহ্তাঁদের উপর আসলেন তখন কিছুকালের জন্য তাঁরা নবী হিসাবে কথা বললেন।
26ইল্দদ আর মেদদ নামে দু’জন লোক ছাউনির মধ্যেই রয়ে গিয়েছিলেন। বেছে নেওয়া বৃদ্ধ নেতাদের মধ্যে এই দু’জনও ছিলেন, কিন্তু তারা মিলন-তাম্বুর কাছে যান নি। তবুও তাঁদের উপর সেই রূহ্এসেছিলেন। তাতে তাঁরাও ঐ সময় ছাউনির মধ্যে নবী হিসাবে কথা বলতে লাগলেন। 27একজন যুবক দৌড়ে গিয়ে মূসাকে বললেন, “ইল্দদ আর মেদদ ছাউনির ভিতরে নবী হিসাবে কথা বলছেন।”
28তখন নূনের ছেলে ইউসা মূসাকে বললেন, “হে আমার প্রভু, ওদের চুপ করবার নির্দেশ দিন।” ইউসা যুবা বয়স থেকে মূসার সাহায্যকারী ছিলেন।
29জবাবে মূসা বললেন, “আমার মান-সম্মান টাই তোমার কাছে বড় হয়ে উঠল? আমি চাই মাবুদের সব লোকেরাই যেন নবী হয় এবং মাবুদ যেন তাঁর রূহ্তাদের উপর দেন।” 30এর পর মূসা ও ইসরাইলীয় বৃদ্ধ নেতারা ছাউনিতে ফিরে গেলেন।
গোশ্তের ব্যবস্থা- ভারুই পাখী
31পরে মাবুদ একটা বাতাস বহালেন। সেই বাতাস সমুদ্র থেকে ভারুই পাখী ঠেলে এনে ছাউনির চারপাশে এক দিনের পথ জুড়ে এমনভাবে ফেলে দিল যে, সেগুলো মাটি থেকে দু’হাত পর্যন্ত উঁচু হয়ে গাদা হয়ে রইল। 32সেই দিন ও সেই রাত এবং তার পরের সারাটা দিন লোকেরা বাইরে গিয়ে ভারুই পাখী কুড়িয়ে আনল। তারা প্রত্যেকেই কমপক্ষে এক হাজার আটশো কেজি করে কুড়াল। সেগুলো তারা ছাউনির চারপাশে বিছিয়ে রাখল। 33কিন্তু সেই গোশ্ত মুখে দিয়ে চিবাতে না চিবাতেই লোকদের বিরুদ্ধে মাবুদ রাগে জ্বলে উঠলেন। তিনি তাদের উপর একটা ভীষণ মহামারী পাঠিয়ে দিলেন। 34সেইজন্য সেই জায়গাটার নাম দেওয়া হল কিব্রোৎ-হত্তাবা (যার মানে “লোভীদের কবর”), কারণ লোকেরা সেখানে লোভীদের দাফন করেছিল।
35এর পর লোকেরা কিব্রোৎ-হত্তাবা ছেড়ে হৎসেরোতে গিয়ে সেখানে রইল।