Mark9:2-37
মার্ক 9
হযরত ঈসা রূহুল্লাহ্র নূরানী চেহারা
2এর ছয় দিন পরে ঈসা কেবল পিতর, ইয়াকুব ও ইউহোন্নাকে সংগে নিয়ে একটা উঁচু পাহাড়ে গেলেন। এই সাহাবীদের সামনে তাঁর চেহারা বদলে গেল।
3তাঁর কাপড়-চোপড় এমন চোখ ঝলসানো সাদা হল যে, দুনিয়ার কোন ধোপার পক্ষে তেমন করে কাপড় কাচা সম্ভব নয়।
4সাহাবীরা সেখানে নবী ইলিয়াস ও নবী মূসাকে দেখতে পেলেন। তাঁরা ঈসার সংগে কথা বলছিলেন।
5তখন পিতর ঈসাকে বললেন, “হুজুর, ভালই হয়েছে যে, আমরা এখানে আছি। আমরা এখানে তিনটা কুঁড়ে-ঘর তৈরী করি- একটা আপনার, একটা মূসার ও একটা ইলিয়াসের জন্য।”
6কি যে বলা উচিত তা পিতর বুঝলেন না, কারণ তাঁরা খুব ভয় পেয়েছিলেন।
7এই সময় একটা মেঘ এসে তাঁদের ঢেকে ফেলল, আর সেই মেঘ থেকে এই কথা শোনা গেল, “ইনিই আমার প্রিয় পুত্র, তোমরা এঁর কথা শোন।”
8সাহাবীরা তখনই চারদিকে তাকালেন কিন্তু ঈসা ছাড়া আর কাউকে দেখতে পেলেন না।
9পরে পাহাড় থেকে নেমে আসবার সময় ঈসা তাঁদের হুকুম দিলেন, “তোমরা যা দেখলে তা ইব্ন্তেআদম মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে না ওঠা পর্যন্ত কাউকে বোলো না।”
10সাহাবীরা ঈসার হুকুম পালন করলেন, কিন্তু মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে ওঠার অর্থ কি তা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে লাগলেন।
11তাঁরা ঈসাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আলেমেরা কেন বলেন প্রথমে ইলিয়াস নবীর আসা দরকার?”
12জবাবে ঈসা তাঁদের বললেন, “এই কথা সত্যি যে, প্রথমে ইলিয়াস এসে সব কিছু আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন। তবে ইব্ন্তেআদমের বিষয়ে কেমন করেই বা পাক-কিতাবে লেখা আছে যে, তাঁকে খুব কষ্টভোগ করতে হবে এবং লোকে তাঁকে অগ্রাহ্য করবে?
13কিন্তু আমি তোমাদের বলছি, ইলিয়াসের বিষয়ে পাক-কিতাবে যা লেখা আছে সেইভাবে তিনি এসেছিলেন, আর লোকেরা তাঁর উপর যা ইচ্ছা তা-ই করেছে।”
ভূতে পাওয়া ছেলেটিকে সুস্থ করা
14ঈসা ও সেই তিনজন সাহাবী অন্য সাহাবীদের কাছে ফিরে এসে দেখলেন, তাঁদের চারপাশে অনেক লোক জমায়েত হয়েছে এবং কয়েকজন আলেম তাঁদের সংগে তর্ক জুড়ে দিয়েছেন।
15লোকেরা ঈসাকে দেখেই খুব আশ্চর্য হয়ে গেল এবং দৌড়ে গিয়ে তাঁকে সালাম জানাল।
16ঈসা আলেমদের জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনারা ওদের সংগে কি বিষয়ে তর্ক করছেন?”
17ভিড়ের মধ্য থেকে একজন লোক জবাব দিল, “হুজুর, আমার ছেলেকে আপনার কাছে এনেছিলাম। তাকে বোবা ভূতে পেয়েছে।
18সেই ভূত যখনই তাকে ধরে তখনই আছাড় দিয়ে মাটিতে ফেলে। তার মুখ থেকে ফেনা বের হয় আর সে দাঁতে দাঁত ঘষে এবং শক্ত হয়ে যায়। আমি আপনার সাহাবীদের সেই ভূতকে ছাড়িয়ে দিতে বললাম, কিন্তু তাঁরা পারলেন না।”
19তখন ঈসা বললেন, “বেঈমান লোকেরা! আর কতদিন আমি তোমাদের সংগে থাকব? কতদিন তোমাদের সহ্য করব? ছেলেটিকে আমার কাছে আন।”
20লোকেরা তখন ছেলেটিকে ঈসার কাছে আনল। তাঁকে দেখেই সেই ভূত ছেলেটিকে খুব জোরে মুচড়ে ধরল। ছেলেটি মুখ থেকে ফেনা বের করতে করতে মাটিতে গড়াগড়ি দিতে লাগল।
21ঈসা তার বাবাকে জিজ্ঞাসা করলেন, “কতদিন হল তার এই রকম হয়েছে?”
লোকটি বলল, “ছেলেবেলা থেকে। 22এই ভূত তাকে মেরে ফেলবার জন্য প্রায়ই আগুনে আর পানিতে ফেলে দিয়েছে। তবে আপনি যদি আমাদের কোন উপকার করতে পারেন তবে দয়া করে তা করুন।”
23ঈসা তাকে বললেন, “‘যদি করতে পারেন,’ এই কথার মানে কি? যে বিশ্বাস করে তার জন্য সব কিছুই সম্ভব।”
24তখনই ছেলেটির বাবা চিৎকার করে বলল, “আমি বিশ্বাস করছি; আমার মধ্যে এখনও যে অবিশ্বাস আছে তা দূর করে দিন।”
25অনেক লোক দৌড়ে আসছে দেখে ঈসা সেই ভূতকে ধমক দিয়ে বললেন, “ওহে বধির ও বোবা ভূত, আমি তোমাকে হুকুম দিচ্ছি, এর মধ্য থেকে বের হও; আর কখনও এর মধ্যে ঢুকো না।”
26তখন সেই ভূত চিৎকার করে ছেলেটাকে জোরে মুচড়ে ধরল এবং তার মধ্য থেকে বের হয়ে গেল। তাতে ছেলেটি মরার মত পড়ে রইল দেখে অনেকে বলল, “ও মারা গেছে।”
27ঈসা কিন্তু তার হাত ধরে তুললে পর সে উঠে দাঁড়াল।
28এর পরে ঈসা ঘরের ভিতরে গেলেন। তখন সাহাবীরা গোপনে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, “আমরা তাকে ছাড়াতে পারলাম না কেন?”
29ঈসা বললেন, “মুনাজাত ছাড়া আর কোন মতেই এই রকম ভূত ছাড়ানো যায় না।”
30পরে তাঁরা সেই জায়গা ছেড়ে গালীল প্রদেশের মধ্য দিয়ে চলে গেলেন। তিনি চেয়েছিলেন যেন কেউ জানতে না পারে যে, তিনি কোথায় যাচ্ছেন,
31কারণ তখন তিনি তাঁর সাহাবীদের শিক্ষা দিচ্ছিলেন। তিনি তাঁদের বলছিলেন, “ইব্ন্তেআদমকে লোকদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হবে। তারা তাঁকে হত্যা করবে এবং তিন দিনের দিন আবার তিনি জীবিত হয়ে উঠবেন।”
32সাহাবীরা কিন্তু তাঁর কথার মানে বুঝতে পারলেন না এবং তাঁকে জিজ্ঞাসা করতেও তাঁদের ভয় হল।
বড় কে?
33তারপর ঈসা ও তাঁর সাহাবীরা কফরনাহূমে গেলেন। তিনি ঘরের মধ্যে গিয়ে সাহাবীদের জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা পথে কি নিয়ে তর্ক করছিলে?”
34সাহাবীরা চুপ করে রইলেন, কারণ কে সবচেয়ে বড় তা নিয়ে পথে তাঁরা তর্কাতর্কি করছিলেন।
35ঈসা বসলেন এবং সেই বারোজন সাহাবীকে নিজের কাছে ডেকে বললেন, “কেউ যদি প্রধান হতে চায় তবে তাকে সবার শেষে থাকতে হবে এবং সকলের সেবাকারী হতে হবে।”
36পরে তিনি একটা শিশুকে নিয়ে সাহাবীদের সামনে দাঁড় করালেন। তাকে কোলে নিয়ে তিনি বললেন,
37“যে কেউ আমার নামে এর মত কোন শিশুকে গ্রহণ করে সে আমাকেই গ্রহণ করে, আর যে আমাকে গ্রহণ করে সে কেবল আমাকে গ্রহণ করে না, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁকেই গ্রহণ করে।”